"ছেলেটি চশমা পরে, ছেলেটির উশখো-খুশকো চুল, ছেলেটির খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। হালের গল্পগুলোতে যেরকম অগোছালো নায়ক থাকে, অনেকটা সেরকম। চালচলন নিয়ে ছেলেটি মাথা ঘামায় না। সে চলে নিজের মতো। আর মেয়েটি? না, এ গল্পে কোনো মেয়ে নেই। বরং একটি, না একটি নয়, একজন নদী আছে।
আমি সর্বদা গল্পের চরিত্রের নামকরণ নিয়ে সমস্যায় পড়ি, এবারও তাই। অতএব ছেলেটির নাম যে কোনো কিছু হতে পারে, আমি ধরে নিলাম ছেলের নাম রুদ্র। তবে নদীর নাম আগেই ঠিক করে রেখেছি, তার নাম নির্ঝরিনী। রুদ্র কলেজে পড়ে, তার কলেজের ঠিক পাশেই সেই নদী। রুদ্রর কলেজ ভাল লাগে না। তার কলেজে যাবার কোনো কারণ নেই। তবু মাঝে মাঝে সে কলেজে যায়, নির্ঝরিনীর জন্য।
ক্লাসে তার মন নেই, সে শুধু নির্ঝরিনীর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে। এদিকে নির্ঝরিনী জানেও না রুদ্র শুধু তাকে দেখতে কলেজে আসে। অবশ্য রুদ্র নামে যে কেউ আছে এটাই সে জানতো না, জেনেছে অনেক পরে। তার অবশ্য দোষ কী? সে হলো নদী। সে নিজের মতো আপন মনে বয়ে যায়। কতজনই তো তার গুণগ্রাহী, ক’জনের কথা মনে রাখবে সে? অবশ্য গুণগ্রাহী হলেও কথা ছিল, রুদ্র তো তার সামনেই আসে না। সারাক্ষণ আড়াল থেকে বিনিসূতার মালা গাঁথে।
উজান দেশের এক সওদাগর, চাঁদ সওদাগর (এই নামটাই সুন্দর)। সে বিপ্লবী পুরুষ, অমাবস্যার বংশধরেরা একবার উজান আর ভাটি দখল করে নিতে চেয়েছিল। চারিদিকে কী ভীতি, কী বিশৃঙ্খলা! তখন এই চাঁদ সওদাগরের জন্যেই উজান ভাটি রক্ষা পেয়েছিল। সওদাগর সওদা করতে তার সওদাগরি নৌকা নিয়ে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ায়। এ জায়গা, ও জায়গা, এ নদী, ও নদী কত নদীতীরেই না সে বেসাতি সাজায়! তবে কয়েক মাস পরপরই সে এক বিশেষ নদীর তীরে সওদা করতে যায়।
চাঁদ সওদাগরের বিয়ে করা মানা। সে হলো সওদাগরদের রাজা, সবার ভাল মন্দ বিপদ আপদ দেখার দায়িত্ব তার। সে বিয়ে করে সংসারী হয়ে গেলে এগুলো কে করবে? নাহলে কবেই চাঁদ সওদাগর সেই নদীতীরে চিরকালের জন্য থেকে যেত!
তবু হৃদয়ের টান উপেক্ষা করা যায় না। তাই তৃষ্ণার্তের মতো মাঝে মাঝেই ফিরে যায় তার কাছে। যেদিন চাঁদ সওদাগরের তরী এসে ওঠে নির্ঝরিনীর বুকে সেদিন তার আনন্দের সীমা থাকে না। অবশ্য এমন নয় যে নির্ঝরিনী তার জন্য অপেক্ষা করে ছিল। সে তার কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে সারাদিন। তাদের মাঝে দেখা হয় কদাচিৎ, কথা হয় আরো কম। আজ চাঁদ সওদাগর এসেছে, নির্ঝরিনীর তাই জোয়ার এসেছে। কতদিন দেখা হয় না! এবার প্রাণের মানুষটির সাথে দুটো কথা বলা যাবে। দুজনে এক হয়ে যাওয়া যাবে কোনো এক জ্যোছনায়। নির্ঝরিনী জানে এই মহামিলন কখনো সম্ভব নয়। চাঁদ সওদাগর তাকে ভালোবাসে সত্য, কিন্তু সে কখনো গৃহী হবে না, তাদের ভালোবাসা চিরকাল এভাবেই চলবে। তাতে অবশ্য ক্ষতি কী? ভালবাসা হলো পৃথিবী আর চাঁদের মতন। মাঝে মাঝে অমাবস্যা আসে, চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার, রজনী আঁধারে ডুবে যায়। তার মানে কি চাঁদ নেই?
অনেকদিন পরপর একেকটি ফাগুনী পূর্ণিমা আসে, উদ্বেলিত হয় জ্যোছনা রজনী, ঠিক যেমন নির্ঝরিনীর বুকে এসে লাগে সওদাগরের নৌকা। মাঝে মাঝে অমাবস্যা, কখনো পূর্ণিমা, কিন্তু চাঁদ আর পৃথিবীর আকর্ষণ যে চিরন্তন, অনেকদিন পর হলেও ফাগুনী পূর্ণিমা ঠিকই আসে। চাঁদ সওদাগরও তাই বারবার ফিরে আসে নির্ঝরিনীর বুকে। কখনো মাস, কখনো বছর পর।
রুদ্র এক অদ্ভূত কবি, তার অদ্ভূত খেয়াল। সে কবিতাগুলো কাউকে পড়তে দেয় না, লেখার পর নির্ঝরিনীর বুকে ভাসিয়ে দেয়। যেদিন থেকে সে কবিতাগুলোকে নির্ঝরিনীর বুকে মুক্তি দেওয়া শুরু করলো সেদিনই নির্ঝরিনী তার খোঁজ পেল। এর পর থেকে তার প্রতিটি কবিতা সে সযত্নে সাজিয়ে রাখে, একটি কবিতাও হারিয়ে যেতে দেয় না। সবগুলো খুব মন দিয়ে পড়ে। রুদ্রর কবিতাগুলো নির্ঝরিনীর খুব ভালো লাগে। এত ভাল লাগে যে ইচ্ছে করে এক্ষুণি উঠে এসে রুদ্রর গালে চুমু খেয়ে যায়। কিন্তু সে যে সওদাগরের কাছে সত্যের বন্ধনে আবদ্ধ। শৃঙ্খল ভাঙার
সাহস তার নেই।
যা বলছিলাম, রুদ্রর কবিতা লেখার অভ্যেস বহুদিনের। প্রথম যখন সে নতুন শহরে এসে নতুন কলেজে ভর্তি হলো তারও আগের। নতুন শহরে আসার কোনো ইচ্ছে ছিল না তার, বাবার কথায় আসতে হয়েছে, নতুন শহরে, নতুন কলেজে। এখানে আসার পর নাগরিক জীবনের অসহ্য একাকিত্বে তিলে তিলে শুকিয়ে যাচ্ছিল কৈশোরের বাঁধ না মানা উচ্ছ্বাস, দেশলাই বাক্সের মতো বদ্ধ কুঠুরিতে এক ফোঁটা সুর-প্লল্পব-রসের আকাঙ্খায় ছটফট করতো সমগ্র রজনী সারাটা দিন। রাতের বেলা বারান্দায় এসে তার কথা বলার বন্ধ্যাত্ব ঘুচতো।
সে কথা বলতো দুরের অট্টালিকার সাথে। বলতো, “কিরে ম্যাচের বাক্সরা? কেমন আছিস? তোদের কত মজা, নারে? সবাই মিলে একসাথে থাকিস, একজনের ওপর একজন, একজনের পাশে একজন। স্তরে স্তরে কতজন মিলেমিশে থাকিস একই অট্টালিকায়। কারো ভেতর আলো জ্বলে, কারো ভেতর আলো নিভে, আবার কারোরটা জালানো থাকে সারা রাত। তোদের জন্ম একসাথে, মরবি একসাথে, কী মজা! আর বোকা মানুষগুলো সন্ধ্যে হতেই এক এক করে তোদের ভেতর ঢুকে পড়ে, অথচ সবাই আলাদা আলাদা। এমনকী যারা একসাথে জন্মেছিল তারা
পর্যন্ত একসাথে থাকে না। তারা মনে করে তারা খুব সুখে আছে। আর তোরা তাদের বন্দীদশা দেখে মনে মনে হাসিস! খুব মজা, না? হাহাহা…” অথবা কোনো একটা তারা এদিক থেকে ওদিক ছুটে গেলে তাকে জোড় করে ডেকে বলতো, “আচ্ছা তোমার সেই কবিতাটা মনে আছে?
পিপীলিকা পিপীলিকা,
দলবল ছাড়ি একা
কোথা যাও, যাও ভাই বলি।
শীতের সঞ্চয় চাই,
খাদ্য খুঁজিতেছি তাই,
ছয় পায় পিলপিল চলি।
মনে আছে তোমার খসে পড়া তারা?”
তারা দাঁড়ায় না, পিপীলিকার মতো সেও চলে যায় কোনো এক অজানা সঞ্চয়ের খোঁজে। দেশলাইয়ের বাক্সগুলোও কোনো উত্তর দিতো না, বরং একটু চেঁচিয়ে বললে তার কথাই তাকে ফিরিয়ে দিতো। বেচারা রুদ্র এভাবেই সারা রাত কাটিয়ে দিতো কথা বলে বলে।
আজকাল আর কবিতা লেখা হয় না। বসন্ত এসেছিল, চলেও গেল! অথচ সেটাকে ধুলিমাখা ঝড়ো বাতাস ছাড়া আর কিছু মনে হয়নি। কবিতাগুলো ছন্দ হারিয়ে পাক খাওয়া ঘুড়ির মতো মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। কবিতার অকাল প্রয়াণে শোকসভা হয় না সত্য, কিন্তু রুদ্রর ভেতরের শোকটি কারো কাছে ধরা পড়লো না, এমনকী ছুটিতে যখন বাড়ি গেল, তার মায়ের কাছেও না। মা বলে, “চেহারার একি হাল বাবা? শহরে খাওয়া নেই বুঝি?” বাবা বলে, “তোমার মুখ এরকম দেখাচ্ছে
কেন? পুষ্টিহীনতায় ভুগছ তো!” আত্মীয় স্বজন যারাই দেখে সবারই এক কথা।
অভিযোগ শুনতে শুনতে রুদ্র ক্লান্ত। তার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, “হ্যাঁ, আমি পুষ্টিহীনতায় ভুগছি, আমি মানসিক পুষ্টিহীনতায় ভুগছি। নাগরিক বাজারে দৈহিক পুষ্টির অভাব নেই, কিন্ত মনের পুষ্টির যে বড় অভাব এই নাগরিক শৃঙ্খলে। হে নগর সভ্যতা, হে নাগরিক দাবানল, হে কঠিনহৃদয় পিতৃ অহঙ্কারী, আমার চিরহরিৎ হৃদয়-মৃত্যুর জন্য যে তোমরাই দায়ী…”
যে ভারী হৃদয়টি নিয়ে সে বাড়ি গিয়েছিল, ফিরে আসার সময় তার ভর বেড়েছে বৈ কমেনি। হৃদয়ের ভার বইতে বইতে ক্লান্ত ছেলেটি সেদিন ক্লাসরুমের এক কোণায় বসেছিল, তৃষ্ণার্ত চোখদুটো জানালা দিয়ে কী যেন খুঁজছিল। যা খুঁজছিল তা পেয়েছিল কিনা জানি না, তবে সেই জানালা দিয়েই সেদিন এক বিশেষ কিছুর সন্ধান সে পেয়েছিল। সন্ধান পেয়েছিল এক বিমোহিত খনির, এক অতলস্পর্শী সুপ্তরাজ্যের, এক মহা আকাঙ্খিত শিশিরভেজা নীলিমার। দেখা পেয়েছিল শারদ জ্যোৎস্নার মর্ত্যলোকের সেই অপ্সরীর, যার পরশে পরাজিত হয় চৈতালী সূর্য, নরম কাশফুলেরা যার পথপানে চেয়ে থাকে। দেখা পেয়েছিল সেই সুর-পল্লব-রসের মহার্ঘ্য আধারের, যার কারণে ছন্দ খেলা করে নবযৌবনার অঙ্গে অঙ্গে, ঢেউ খেলে যায় প্রতিটি কিশলয়ে, যার কারণে আজও বেঁচে আছে বেদনা জর্জরিত হাজারো প্রেমর্ষি, হয়তো রুদ্র নিজেও। কোনো এক অখ্যাত কলেজের ভাঙাচোরা জানালা দিয়ে এক বিমর্ষ প্রেমর্ষি সেদিন দেখা পেয়েছিল তার স্বপনচারিণীর, নির্ঝরিনী যার নাম।
এরপর থেকে রুদ্রকে আর ছন্দ খুঁজে হয়রান হতে হয়নি। দেশলাইয়ের বাক্সগুলো সেদিন রাত থেকে কথা বলতে লাগলো, খসে পড়া তারাগুলোও যাবার পথে দেখা করে যেতে লাগলো। এ এক নতুন রুদ্র। না, না, নতুন কেন? এই তো প্রকৃত রুদ্র। রুদ্র সত্যি এক অদ্ভূত কবি। কারণ সে তো সকলের কবি নয়, সে শুধু নির্ঝরিনীর কবি। তার কাব্য শুধু নদীর জন্য, তার বেঁচে থাকা কেবল নদীকে ঘিরে। দুনিয়ার আর সব মিথ্যে, আর সব মেকি।
নির্ঝরিনী আর চাঁদ সওদাগরের সম্পর্ক রুদ্রর অজানা নয়। প্রায়ই তার ইচ্ছা হয় সওদাগরকে এক নজর দেখার, তারপর আবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আজ সওদাগর চলে যাবে ঘাট ছেড়ে। রুদ্র ঠিক করলো আজ তার সাথে দেখা করতে যাবে। হয়তো আজ না হলে কোনোদিনই দেখা হবে না।
“আপনার নাম চাঁদ সওদাগর কেন?”
“তোমার নাম রুদ্র কেন?”
“বাংলাদেশের ওপর দিয়ে কর্কটক্রান্তি গিয়েছে তাই।”
“ও”
“আপনি বেহুলার স্বামী?”
শব্দ করে হেসে উঠলো সওদাগর। রুদ্রর বিরক্তি লাগছে, সে বললো, “হাসেন কেন?” “আমরা সওদা করে বেড়াই দেশ বিদেশে। বাপ মা ভেবেছিল, চাঁদ সওদাগর নাম রাখলে ছেলের স্ত্রী ভাগ্য ভাল হবে। ছেলে দেশ বিদেশ সওদা করে বেড়াবে, বেহুলার মতো বৌ থাকলে কোনো বিপদ আপদ হবে না।”
“ভালোই তো ভেবেছিল, এত হাসার কী আছে?”
“ছেলে যে চিরকুমার থাকবে সেটা মনে হয় কুষ্ঠীতে লেখা ছিল না” আবার শব্দ করে হেসে উঠলো সওদাগর।
“নির্ঝরিনীকে বিয়ে করবেন না?”
“ভালোবাসি, এটা যথেষ্ঠ নয় কি? বিয়ে করে তার প্রমাণ দিতে হবে?”
“আচ্ছা আসি।”
“সাবধানে যেও, আজ পূর্ণিমা।”
“পূর্ণিমা! অমাবস্যা তো নয়।”
চলে আসার সময় পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো সওদাগর মুচকি মুচকি হাসছে। পূর্ণিমার জন্য সাবধানে যাওয়ার কথা সে কেন বললো রুদ্র সেটাই ভাবছে হাঁটতে হাঁটতে। তবে কি রুদ্র যেটা ঠিক করে রেখেছিল সওদাগর সেটা জেনে ফেলেছে? সে আস্তে আস্তে চারপাশে তাকালো, তারপর আকাশের দিকে তাকালো। তার ধারণাই সত্য। আজ সেই দিন, আজ সেই পূর্ণিমা, যার জন্য সে অপেক্ষা করেছিল অনন্তকাল। রুদ্র জানতো এমন এক পূর্ণিমা আসবে যার জ্যোছনায় তার মরে যেতে ইচ্ছে করবে। সে ঠিক করে রেখেছিল, সেই দিনই হবে তার ভৌগোলিক বন্দীদশার শেষ দিন।
আজ এতদিন পর সেই রজনী উপস্থিত হয়েছে, আজ এতদিন পর রুদ্র মুক্তি পাবে। যা জানার ছিল তাও চাঁদ সওদাগরের কাছ থেকে জেনে এসেছে, সুতরাং কিছুতেই এই পূর্ণিমার অপচয় করা যাবে না। কিছু কাজ এখনও বাকি, সেগুলো দ্রুত সারতে হবে। রুদ্র তার নাগরিক বন্দীশালা, তার দেশলাইয়ের বাক্সে শেষবারের মতো প্রবেশের জন্য ছুটতে লাগলো। ভেবেছিল শেষ করতে রাত অনেক হয়ে যাবে, কিন্তু মধ্যরাতের মাঝেই সব কাজ হয়ে গেল। কী মনে করে আসার সময় একটা কাগজে শেষের কবিতার এক প্রিয় কবিতার চারটে লাইন লিখে রেখে এসেছে। বাড়ির ঠিকানায় চিঠিও লিখে দিয়েছে আজ রাতেই সে নির্ঝরিনীকে বিয়ে করছে, তারা যেন আর চিন্তা না করে।
রুদ্র এখন সেই সুর-পল্লব-রসের আধার নির্ঝরিনীর জলে হাঁটু ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পূর্ণিমার চাঁদখানা দেখে তার চাঁদ সওদাগরের কথা মনে পড়লো। তার কথা মনে করে আপন মনেই হেসে উঠলো, বুক কাঁপানো অট্টহাসি, হাসি ওপারে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে ফিরে আসতে লাগলো। হঠাৎ নির্ঝরিনীর জলে তার ছায়ার দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠলো। সে হাসছে অথচ তার ছায়া হাসছে না!
ছায়াকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি হাসছো না কেন?”
ছায়া পাল্টা জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কেন হাসছো?”
রুদ্র আবার হেসে উঠলো, “হাসবো না? চাঁদসওদাগরের কথা মনে হলো যে! বেচারা।”
“চাঁদ সওদাগর বলে কেউ আছে?”
“দেখো, মাঝরাতে এই অবস্থায় ঠাট্টা ভাল লাগছে না।”
“তুমি জানো আমি ঠাট্টা করি না।”
“তবে? মাঝরাতে আমার সময় নষ্ট করার ফন্দি, না? এসবে কাজ হবে না। যাও ভাগো।”
“কোথায় যাবো? তোমায় ছাড়া কোথাও যে আমি যেতে পারি না সেটাও তুমি জানো।”
“তবে চুপ করো।”
“কেন এড়িয়ে যাচ্ছো?”
“চাঁদ সওদাগর অবশ্যই আছে। আমি নিজে তাকে দেখেছি, তার সাথে কথা বলেছি।”
“আর কেউ দেখেছে?”
“সেখানে অনেকেই ছিল।”
“তাদের কাউকে তুমি চেনো”
“না, তারা সবাই সওদাগরের সাথে এসেছে।”
“তার মানে এ শহরের কেউ তাকে দেখেনি।”
“হয়তো দেখেছে।”
“এটা সওদাগরি যুগ না। এযুগে এরকম একজন সওদাগর আসলো অথচ কেউ তোমাকে সে কথা বললো না, তার আশেপাশে এ শহরের কাউকে দেখা গেল না। কেন?”
“জানি না।”
“তুমি আসলে জানতে চাও না…”
“হ্যাঁ আমি জানতে চাই না”
চিৎকার করে উঠলো রুদ্র, “আমি কিচ্ছু জানতে চাই না। চাঁদ সওদাগর আছে কি নেই তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। কিচ্ছু না। আমার দুনিয়ায় আমি আর নির্ঝরিনী ছাড়া আর কেউ নেই। এই দুনিয়া শুধু আমাদের দুজনের দুনিয়া। আজ আমরা দুজন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবো। এখানে তাই অন্য কেউ আছে কি নেই তার কোনো গুরুত্ব নেই। এই দুনিয়া আজ থেকে শুধু আমাদের। এখানে আর কারো কোনো প্রবেশাধিকার নেই, সওদাগরের নেই, এমনকী তোমারও নেই।”
“তবে আর কী?” ছায়া হতাশ হয়ে বললো, “এই আমি চুপ করলাম। এবার তোমার যা খুশি তাই কর…”
রুদ্র আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে থাকলো, কোমড় পানিতে চলে আসলো। তার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে খুব হাসি পাচ্ছে। তার মা কত চেষ্টা করেছে তাকে সাঁতার শেখানোর। বাবাও কম চেষ্টা করেননি, আত্মীয় স্বজনরাও করেছে। কিন্তু কেউ তাকে সাঁতার শেখাতে পারে নি। একটু গভীর জলে নিয়ে গেলেই সে কেঁদে-কেটে সারা পাড়া মাথায় তুলতো। সেই সাঁতার না জানা ছেলেটি আজ জলে নেমে একটুও ভয় পাচ্ছে না! এটা ভেবেই রুদ্রর হাসি পাচ্ছে। কিন্ত মন খুলে হাসতে পারছে না। কোথায় যেন তাল কেটে যাচ্ছে। তার ছায়ার কথাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে।
“চাঁদ সওদাগর কি সত্যি নেই। আচ্ছা, ধরলাম সে নেই। তবে? তবে কি আমার ফিরে যাওয়া উচিত? না, কক্ষনো না। এই পূর্ণিমা অপচয় করার সাহস আমার নেই। এই মহামিলন অস্বীকার করার স্পর্ধা আমার নেই। আচ্ছা, সে আছে কি নেই তা দিয়ে আমি কী করবো? আমার মনের সব হিসেব-নিকেশ তো নির্ঝরিনীর সাথে। আমার মনে কেন তবে বারংবার চাঁদ সওদাগর ফিরে আসছে? না, এ থেকে আমাকে পরিত্রাণ পেতেই হবে। আমার মুক্তিতেই এর পরিত্রাণ। আমার মনে, আমার হৃদয়ে শুধু নির্ঝরিনী থাকবে, শুধুই নির্ঝরিনী। এই মহামিলনের জন্য আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। আমি আসছি হে নির্ঝরিনী, আমি আসছি তোমার কাছে। আমি আসছি তোমার মাঝে…”
নাগরিক বিশৃঙ্খলা হতে বহু দূরে, ভরা পূর্ণিমার মাঝে যে মহাকাব্যিক রূপকথাটি জন্ম নিলো, এবং সেখানেই শেষ হয়ে গেলো, তা কেউ জানতেও পারলো না। রুদ্র কিন্ত নির্ঝরিনীর জলে নামার সময় তার জন্যে লিখা শেষ কবিতাটি বুকপকেটে নিয়ে যেতে ভুলেনি। নির্ঝরিনীও অসমাপ্ত বলে সেই কবিতাকে কোনো অসম্মান করেনি, বরং আজও মন খারাপ হলে কাঁচা হাতে লেখা কবিতাখানি মাঝে মাঝে বের করে পড়ে।
কবি ও কবিতা, কেউই যে ভুলবার নয়।। "
★. Source : ©. আকাশ-দীপ্তা ওর্য়াডপ্রেস (June 24, 2016)
﹋﹋﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹋﹌﹋
** Note: ® [This is one of my Favorite Bangla Articles. I own none of the content within the post, only the drafting/typing time spent. No copyright infringement intended. The contents of this post are the intellectual property and copyright of their owner(s)/author(s). All content is owned by its respective owner(s)/companies. If you own any of the content and wish for me to remove this post from my personal blog (Dhumkeatu's Diary - A personal online diary : Where I Wandered Lonely as a Cloud...) please contact me and I will do so. Here this post is provided for educational purposes and personal use only. Thank you.]
﹋﹌﹋﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹋﹌﹋
*** N.B : [All the post on this blog (Dhumkeatu's Diary) is only for Personal Collection/Personal use only. There are no other intention to Plagiarism on any others post or content. Advance apologize for any objection of any Author, Publisher, Blog, Website & the others printing media for posting/re-posting any contents on this Personal Blog - "Dhumkeatu's Diary - A personal online diary : where I Wandered Lonely as a Cloud."]
*** Believe : "Happiness is a Choice & Life is Beautiful."
''Zindagi Na Milegi Dobara." Just keep Livin...!!!
Keep Smile.......!! Happy Living......!!! :) :) :)
Thank You, Good Luck......!!! :) :) :) 🌷🙏🌷
*** Posted by : © "Dhumkeatu's Diary" || 25.06.2018 || 🇧🇩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন