আমি বাই বর্ন ফাইটার । এটা আমার বোধহয় গর্ব করেই বলা উচিত। যেই বয়সে সবাই খেলনা কেনার বায়না ধরে, কত রকমের জিনিপত্র নিয়ে খেলে, মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে, সেই সাত বছর বয়সে আমার ক্যান্সার হলো। আমার বাবা মার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো, আকাশ ভেঙে পড়লো দুজনের মাথায়। ধবধবে সাদা কোকড়া চুলের গোলাপি ঠোটের একমাত্র ছেলে আমি তাদের, আমার ক্যান্সার হয়েছে। অনেকে বলতো দেবশিশু, অনেকে বিদেশি শিশু।
আমি চিকিৎসা নিতে গেলাম বাইরে। সেই ছোট্ট আমি ক্যন্সার কে বলেছিলাম , মাথা পেতে নিয়েছি। ক্যমোথেরাপি রেডিয়েশনে ঝাঝরা হয়েছি। দেবশিশুটি আর আগের মত থাকেনি। ভেঙে চুড়ে টুকরো টুকরো হয়েছি। ভুগেছি দীর্ঘ এক দশক। হার মানিনি। এক হাতে স্যালাইন নিয়ে পড়তে বসেছি হসপিটাল বেডে। একের পর এক কেমোর ডোজ, সারাদিন বমি আর বমি।
সাত বছর বয়সে আমাকে বুঝতে হয়েছে, জীবনের মূল্য। আমাকে বাঁচতে হবে। সংগ্রাম ছিলো বেঁচে থাকার।
আমি চুপ করে শুনেছি, দেখেছি। ক্ষুধা শ্রম আর্থিক টানাপোড়ন শারীরিক কষ্ট বায়োপসি বন ম্যরো টেস্ট কিংবা ফাইন নিডল এসপিরেশন, বায়োপসি সব সেই শিশু সয্য করেছে, এ আর এমন কি।
মজার ব্যাপার হলো, সকালে পাশের বেডের যেই ছেলেটির সাথে আমি খেলেছি, সন্ধ্যায় তার মৃত্যু দেখেছি। ছোট ছিলাম, দেখতাম বুখে ডাক্তার জোরে জোরে চাপ দেয়, কেন দেয় বুঝি না। একটু পর শুনি আর নেই সে। বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ফেইল করে প্রিয় বন্ধু মারা গেছে। সত্যি বলতে আমার সাথে কেউ বেঁচে নেই। কেউ এক, দুই, দশ বছর পর মারা গেছে। আমি সামহাউ এই পর্যন্ত এসেছি।
সবকিছু নাকি ভালোর জন্য হয়। ক্যান্সার আমাকে প্রজ্ঞাবান করেছে। আমার ম্যাচুরিটি লেভেল কয়েক বছর এগিয়ে নিয়েছে। আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে, দেখতে শিখিয়েছে। আমি একটি দেয়াল ঘড়ি সবাই যেভাবে দেখে সেভাবে দেখি না।
প্রথমে লজ্জ্বা পেতাম, নিজের কথা বলতে। করুনা পাবার ভয়ে। এলাকাবাসীরা জানতো, তারা দেখলেই জিজ্ঞেস করতো, শরীর ঠিকতো? হয়তো মনে মনে বলতো, কতদিন বাঁচবে?
বড় হবার সাথে সাথে চেপে যেতে লাগলাম রোগের কথা। খুব কাছের লোকেরা ছাড়া কেউ জানতো না রোগের কথা। করুনা পাবার দৃষ্টি আমি জানি। আমার আজো মনে হয় কখনও কেউ আমাকে ভালোবাসে নি, ক্যানসার সারভাইভড চাইল্ড হিসেবে করুনা করেছে।
কেন যেন মনে হচ্ছে, আর বেশিদিন সময় নেই। বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ দেখা দিয়েছে। আলসার নিয়ে বেশ ভুগছি, মাসল পেইনও অনেক। শরীর ভেঙে পড়ছে ভিতর ভিতর। ইনসমনিয়া প্রকট হয়েছে। ডিপ্রেশন ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে। তাই মনে হচ্ছিলো লিখে যাওয়া দরকার।
হুডি বলেন আর দারিদ্র্যতার কথা বলেন শাহবাগের কথা বলেন, সব অপবাদ মাথা পেতে নিয়েছি। কেউ ভালোবাসেনি, সাময়িক করুনায় কাছে এসেছে। আমি বোকার মত তাদের সবকিছু ভালোবাসা বলে নিয়েছি। আবার পরবর্তিতে তা নিয়ে তাচ্ছিল্য শুনেছি, খোটা শুনেছি। হেসেছি, রেগেছি, ক্ষোভে উম্মাদ হয়েছি। শৈশবকালীন দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা অনেক সাইকোলজিকাল সমস্যায় ফেলে দেয়। কেউ জানতেও চায়নি আমার কথা। মুখ বুজে সব সয়ে নিয়েছি। হুমকি পেয়েছি, শিক্ষাজীবন ধ্বংসের আলটিমেটাম কাঁধে বয়ে বেড়িয়েছি। শুধু বিবেকের কাছে পরিষ্কার ছিলাম। ঘৃণা করেছেন, ভ্রু কুচকে তাকিয়েছেন। একটা খারাপ জঘন্য ছেলে বলে এড়িয়ে চলেছেন। আমি এড়িয়েছি ভীড়।
কিন্তু আমি আমিই। মাথা নীচু করে শুনতে জানি, মন উচু করে বাঁচতে জানি। আমি সংগ্রাম জানি। ব্যাকবোনলেস হয়ে বাঁচতে শিখিনি। উল্লাসে স্বভাবে উগ্রতা দেখাইনি। ভেবেছি দেখেছি, নিজের মতের মিল না হলে তার উপর ঝাপিয়ে পড়িনি, সরে এসেছি তার পথ থেকে। লাকুম দ্বিনুকুম ওয়ালিয়া দ্বিন। তোমার পথ তোমার কাছে, আমারটা আমার।
স্বাধীন চিন্তা করেছি সর্বদা। তাই কিছু কথা জানিয়ে যাওয়া দরকার বলে মনে করছি। যদি কাল না থাকি ? হাজার হাজার ক্যানসার আক্রান্ত শিশু কিশোরের কাছে একটি নাম অনুপ্রেরনা হয়ে থাকলেই আমার জনম স্বার্থক। নামটি সিডাটিভ হিপনোটিক্স।
সবাইকে ধন্যবাদ, যারা আমাকে নিয়ে চিন্তিত। তাদেরকে শুধু একটাই কথা বলার আছে, আই এম এ ফাইটার। আই উইল ফাইট টিল মাই ডেথ। ডোন্ট বি টেন্সড।
সবাই ভালো থাকবেন। সাহায্য কিংবা করুনা করবেন না, পারলে বিনিময়ের উর্ধ্বে ভালোবেসেন একটু। এই জিনিষটির খুব অভাব জীবনে, তোমাকে একসময় আর্থিক সাহায্য করেছি, তাই আমাকে ভালোবাসতে হবে। জিনিষটা নিজেকে কীটের পর্যায়ে ফেলে দেয়। আর কখনও লাইক ফলোয়ার চাইনি, মনের কথা বলতে চেয়েছি। লাইক কমেন্ট হিট অতি তুচ্ছ একটি ব্যাপার, জীবন অনেক বড়, জীবন ফেসবুক না।
খুব ইচ্ছে ছিলো অনকোলোজি(ক্যানসার) নিয়ে পড়বো, অনকোলোজিস্টই হবো। আমার হাতেই বাঁচবে আমার রোগে আক্রান্ত শিশুরা। কিন্তু মন দিনকে দিন বিক্ষিপ্ত হচ্ছে। মাঝে মধ্য নিজেকে ইনসেইন মনে হয়। প্রচন্ড চাপা স্বভাবের আমি আজ সব অকপটে বলে ফেললাম, এটাই আমার কাছে বিশাল ইনস্যানিটি। ঐ যে বললাম, কেন জানি মনে আর হাতে তেমন সময় নেই।
জনমানুষের সমস্ত আড্ডা ভীড় থেকে নিজেকে সড়িয়ে নিলাম বেশ কিছুদিনের জন্য। জানি না আর কতদিন, তবে যতদিন বেঁচে থাকি, মাথা উচু করেই বাঁচবো।
তবে লেখালেখি জারি থাকবে।
আই এম সিডাটিভ হিপনোটিক্স, বাট ইউ ক্যান কল মি এমেজিং ! হা: হা: হা:!
সবাই ভালো থাকবেন। আর শেষে অবশ্যই জীবনানন্দ দাশ
'একটি নক্ষত্র আসে; তারপর একা পায়ে চ'লে
ঝাউয়ের কিনার ঘেঁষে হেমন্তের তারাভরা রাতে
সে আসবে মনে হয়; - আমার দুয়ার অন্ধকারে
কখন খুলেছে তার সপ্রতিভ হাতে!'
** Copyright : © Tanjir Islam Britto (সিডাটিভ হিপনোটিক্স)
﹋﹋﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹋﹌﹋
** Note: ® [This is one of my Favorite Bangla Articles. I own none of the content within the post, only the drafting/typing time spent. No copyright infringement intended. The contents of this post are the intellectual property and copyright of their owner(s)/author(s). All content is owned by its respective owner(s)/companies. If you own any of the content and wish for me to remove this post from my personal blog (Dhumkeatu's Diary - A personal online diary : Where I Wandered Lonely as a Cloud...) please contact me and I will do so. Here this post is provided for educational purposes and personal use only. Thank you.]
﹋﹌﹋﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹋﹌﹋
*** N.B : [All the post on this blog (Dhumkeatu's Diary) is only for Personal Collection/Personal use only. There are no other intention to Plagiarism on any others post or content. Advance apologize for any objection of any Author, Publisher, Blog, Website & the others printing media for posting/re-posting any contents on this Personal Blog - "Dhumkeatu's Diary - A personal online diary : where I Wandered Lonely as a Cloud."]
*** Believe : "Happiness is a Choice & Life is Beautiful."
''Zindagi Na Milegi Dobara." Just keep Livin...!!!
Keep Smile.......!! Happy Living......!!! :) :) :)
Thank You, Good Luck......!!! :) :) :) 🌷🙏🌷
*** Posted by : © "Dhumkeatu's Diary" || 06.07.2018 || 🇧🇩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন