রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৯

হাদীসের ভাষ্যে মৃত্যুর পর ধারাবাহিক যা ঘটবে

মৃত্যু প্রতিটি প্রাণের অবধারিত পরিণতি। ইসলাম বিস্তারিত জানিয়ে দেয় মৃত্যুর পর মানুষের গন্তব্য কোথায় হবে এবং কীভাবে হবে। যেমন নাকি জানিয়ে দেয় জন্মের আগে সে কোথায় ছিল, কীভাবে ছিল। কীভাবে তার সৃষ্টি সম্পন্ন হয়েছে এবং জন্মের পর থেকে মৃত্যু অবধি সে কীভাবে থাকবে, কীভাবে জীবন যাপন করবে – সবকিছু।

ইনশাআল্লাহ, এ নিবন্ধে মৃত্যু পরবর্তী অবস্থার ধারাবাহিক বিবরণ তুলে ধরা হবে, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি দীর্ঘ হাদীসে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। সাহাবী হযরত বারা ইবনে আযিব (রা.) এর বর্ণনায় পূর্ণ হাদীসটির অনুবাদ নিম্নে তুলে ধরছি।

হযরত বারা ইবনে আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম (সা.) এর সঙ্গে এক আনসারী লোকের জানাযায় বের হয়েছি। আমরা কবর পর্যন্ত পৌঁছলাম, কিন্তু তখনও কবর খোঁড়া হয়নি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বসে গেলেন এবং আমরাও তাঁর চারপাশে এমনভাবে বসে গেলাম যেন আমাদের মাথায় পাখি বসে আছে। তখন তাঁর হাতে একটি কাঠের টুকরা ছিল যা দিয়ে তিনি মাটিতে দাগ কাটছিলেন। এরপর তিনি মাথা তুললেন এবং বললেন, তোমরা আল্লাহর তাআলার কাছে কবরের আযাব থেকে পানাহ চাও। কথাটি তিনি দুবার বা তিনবার বললেন।

এরপর বললেন, মুমিন বান্দা যখন দুনিয়াকে বিদায় দিয়ে আখিরাতের দিকে অগ্রসর হতে থাকে তখন উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট একদল ফেরেশতা আসমান থেকে তার কাছে আসেন, যাঁদের চেহারা সূর্যের মত। তাঁদের সঙ্গে বেহেশতের কাফন সমূহের একটি কাফন থাকে। বেহেশতের সুগন্ধিগুলোর একটি তাঁদের সঙ্গে থাকে। তারা সে ব্যক্তি থেকে দৃষ্টির দূরত্ব পরিমাণ দূরে অবস্থান করেন।

এরপর মৃত্যুর ফেরেশতা (আযরাঈল আ.) আসেন। তিনি তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন, হে পবিত্র আত্মা! বের হয়ে এসো আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে। রাসূল (সা.) বলেন, তখন তার রূহ বের হয়ে আসে যেমনিভাবে মশক থেকে পানি বের হয়ে আসে। তখন মৃত্যুর ফেরেশতা তাকে গ্রহণ করেন এবং এক মুহূর্তের জন্যেও ঐ ফেরেশতাগণ তাকে মৃত্যুর ফেরেশতার হাতে থাকতে দেন না; বরং তাঁরা নিজেরাই তাকে গ্রহণ করেন এবং তাকে ঐ কাফনের কাপড় ও ঐ সুগন্ধির মাঝে রাখেন। ফলে তার থেকে পৃথিবীর বুকে প্রাপ্ত সকল সুগন্ধির চেয়ে উত্তম মেশকের সুগন্ধ বের হতে থাকে।

রাসূলে কারীম (সা.) বলেন, তাকে নিয়ে ফেরেশতাগণ উপরে উঠতে থাকেন, আর যখনই তারা ফেরেশতাদের মধ্যে কোন ফেরেশতাদলের নিকট পৌঁছেন তাঁরা জিজ্ঞাসা করেন, এ পবিত্র রূহটি কার? তখন মানুষ দুনিয়াতে যেসব উপাধি দ্বারা ভূষিত করত সেসবের সর্বোত্তমটি দ্বারা ভূষিত করে ফেরেশতাগণ বলেন, এ হচ্ছে অমুকের ছেলে অমুকের রূহ।

এভাবে তাঁরা প্রথম আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যান। অতঃপর তাঁরা আসমানের দরোজা খুলতে বলেন, অমনি তাঁদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হয়। তখন প্রত্যেক আসমানের সম্মানিত ফেরেশতাগণ তার পরবর্তী আসমান পর্যন্ত বিদায় সম্ভাষণ জানান। এভাবে তাকে নিয়ে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত পৌঁছানো হয়। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দার ঠিকানা তোমরা ইল্লিয়্যীনে লিখ এবং তাকে জমিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। কেননা আমি তাদেরকে জমিন থেকে সৃষ্টি করেছি এবং জমিনের দিকেই তাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করব। অতঃপর জমিন থেকে তাদেরকে আবার বের করে আনব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, সুতরাং তার রূহ আবার তার দেহে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

অতঃপর তার কাছে দুজন ফেরেশতা আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার রব কে? তখন সে জবাব দেয়, আমার রব হচ্ছেন আল্লাহ। অতঃপর জিজ্ঞাসা করেন, তোমার দ্বীন কী? তখন সে বলে, আমার দ্বীন হলো ইসলাম। তাঁরা আবার তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের কাছে যে লোকটি প্রেরিত হয়েছেন তিনি কে? সে উত্তরে বলে, তিনি আল্লাহ তাআলার রাসূল (সা.)। তাঁরা তাকে আবারো জিজ্ঞাসা করেন, তুমি এসব কীভাবে জানতে পারলে? সে বলে, আমি আল্লাহ তাআলার কিতাব পড়েছি, তার উপর ঈমান এনেছি এবং তাকে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করেছি। তখন আসমানের দিকে একজন আহ্বানকারী ডেকে বলবে, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্যে একটি বেহেশতী বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে একটি বেহেশতী পোশাক পরিয়ে দাও, আর তার জন্যে বেহেশতের দিকে একটি দরোজা খুলে দাও।

রাসূল (সা.) বলেন, তখন তার দিকে বেহেশতের সুখ-শান্তি ও বেহেশতের সুঘ্রাণ আসতে থাকে এবং তার জন্যে তার কবরকে তার দৃষ্টিসীমার দূরত্ব পরিমাণ প্রশস্ত করে দেওয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, অতঃপর তার নিকট একজন সুন্দর চেহারাবিশিষ্ট সুবেশী ও সুগন্ধিযুক্ত ব্যক্তি আসে এবং তাকে বলে, তোমাকে সন্তুষ্ট করবে এমন বিষয়ের সুসংবাদ গ্রহণ করো। এ হচ্ছে ঐ দিন যে দিনের ব্যাপারে তোমার সঙ্গে ওয়াদা করা হয়েছিল। তখন সে ওই লোককে জিজ্ঞাসা করবে, তুমি কে? তোমার চেহারা তো এমন চেহারা যা কল্যাণ বয়ে আনে। তখন সে বলে, আমি তোমার নেক আমল। তখন সে বলবে, হে আল্লাহ! কিয়ামত কায়েম করো! হে আল্লাহ! কেয়ামত কায়েম করো! যাতে আমি আমার পরিবার ও সম্পদের দিকে যেতে পারি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আর কাফের বান্দা যখন পৃথিবী ছেড়ে আখিরাতের দিকে অগ্রসর হতে থাকে, তখন আকাশ থেকে একদল কালো চেহারা বিশিষ্ট ফেরেশতা তার কাছে অবতীর্ণ হন, যাদের সঙ্গে শক্ত চট থাকে। তাঁরা ঐ ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তির দূরত্ব পরিমাণ দূরে অবস্থান করেন। অতঃপর মৃত্যুর ফেরেশতা তার কাছে আসেন এবং তার মাথার কাছে বসেন। এরপর বলেন, হে নিকৃষ্ট আত্মা, আল্লাহ তাআলার ক্রোধের দিকে বের হয়ে এসো।

রাসূল (সা.) বলেন, এ সময় রূহ ভয়ে তার দেহের এদিক – সেদিক পালাতে থাকে। তখন মৃত্যুর ফেরেশতা তাকে টেনে বের করে আনে, যেমন লোহার গরম শিক ভেজা পশম থেকে টেনে বের করা হয়।

মালাকুল মাউত তাকে গ্রহণ করেন। কিন্তু গ্রহণ করার পর মুহূর্তের জন্যে নিজের হাতে রাখে না; বরং অপেক্ষমান ফেরেশতাগণ তাড়াতাড়ি তাকে সে চটে জড়িয়ে নেন। তখন তার থেকে এমন দুর্গন্ধ বের হতে থাকে যা পৃথিবীর সকল গলিত লাশের দুর্গন্ধের চেয়েও আরো বেশি দুর্গন্ধ। তাকে নিয়ে ফেরেশতাগণ উপরে উঠতে থাকেন। তাকে নিয়ে তাঁরা যখনই ফেরেশতাদের কোন দলের কাছে পৌঁছান, তারা জিজ্ঞাসা করেন, এ নিকৃষ্ট রূহটি কার? তখন দুনিয়াতে লোকেরা তাকে যে সব উপাধিতে ভূষিত করত সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপটি দিয়ে ভূষিত করে ফেরেশতাগণ বলবেন, এ হচ্ছে অমুকের ছেলে অমুক। এভাবে তাকে প্রথম আকাশ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। অতঃপর তার জন্যে আকাশের দরজা খুলে দিতে চাওয়া হয়, কিন্তু খুলে দেওয়া হয় না।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এ আয়াতটি পাঠ করেন-

لا تفتح لهم أبواب السماء ولا يدخلون الجنة حتى يلج الجمل في سم الخياط

অর্থ: ‘তাদের জন্যে আসমানের দরজা সমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যে পর্যন্ত না সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে।’ –সূরা আ’রাফ, আয়াত : ৪০

তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, তাঁর ঠিকানা সিজ্জীনে লিখ, জমিনের সর্বনিম্নস্তরে। ফলে তার রূহকে জমিনের উপর খুব জোরে নিক্ষেপ করা হয়। একথা বলার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) এ আয়াতটি তেলাওয়াত করেন-

ومن يشرك بالله فكأنما خر من السماء فتخطفه الطير أو تهوي به الريح في مكان سحيق

অর্থ: ‘যে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শরীক করে সে যেন আকাশ থেকে পড়েছে, অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেছে। অথবা ঝঞ্জাবায়ু তাকে বহুদূরে নিক্ষিপ্ত করেছে।’ –সূরা হজ্জ, আয়াত : ৩১

এরপর তার রূহ তার দেহে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তখন তার কাছে দুজন ফেরেশতা আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। অতঃপর তাঁরা কাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার পরওয়ারদেগার কে? সে বলে, হায়! হায়! আমি তো জানি না। অতঃপর জিজ্ঞাসা করেন, তোমার দ্বীন-ধর্ম কি? সে বলে, হায়! হায়! আমি তো জানি না। এরপর জিজ্ঞাসা করেন, এ লোকটি কে, যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল? সে বলে, হায়! হায়! আমি জানি না। এ সময় আকাশের দিক থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করে বলে যে, সে মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্যে দোযখের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং দোযখের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। তখন তার দিকে দোযখের উত্তাপ ও লু হাওয়া আসতে থাকে। আর তার কবরটি তার জন্যে এত সংকুচিত হয়ে যায় যে, তার এক দিকেড় পাঁজরের হাড় অপর দিকে ঢুকে যায়।

এ সময় তার নিকট একজন অতি কুৎসিক বিভৎস চেহারা বিশিষ্ট নোংরা অতি দুর্গন্ধযুক্ত লোক আসে এবং বলে, তোমার অপছন্দনীয় বিষয়ের সুসংবাদ গ্রহণ কর। এ দিনটি সম্পর্কে দুনিয়াতে তোমার সঙ্গে ওয়াদা করা হতো। তখন সে জিজ্ঞাসা করে, তুমি কে? তোমার চেহারাটি এমন চেহারা যা খারাপ কিছু বয়ে আনে। তখন সে বলে, আমি তোমার বদ আমল। তখন সে বলে, হে আল্লাহ! কিয়ামত কায়েম করো না। অপর এক বর্ণনায়ও এভাবে বর্ণিত হয়েছে, তবে সে বর্ণনায় এ অতিরিক্ত অংশটুকুও রয়েছে যে, যখন মুমিন বান্দার রূহ বের হয়, তখন আকাশ ও জমিনের মধ্যস্থলে অবস্থিত ফেরেশতাগণ এবং আকাশের ফেরেশতাগণ সকলে তার জন্য রহমতের দুআ করতে থাকে এবং তার জন্যে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। আর প্রত্যেক দরজায় দ্বাররক্ষক ফেরেশতাই আল্লাহর নিকট এ দুআ করতে থাকেন যে, তার রূহ যেন ঐ ফেরেশতার দরজা দিয়ে উঠানো হয়।

পক্ষান্তরে বদকারের রূহ তার রগসহ টেনে বের করা হয়। আসমান-জমিনের মধ্যস্থলের ফেরেশতাগণ ও আসমানের ফেরেশতাগণ তার উপর অভিশাপ করতে থাকে এবং তার জন্যে আকাশের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর প্রত্যেক দরজার দ্বাররক্ষক ফেরেশতাই আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করতে থাকেন যে, ঐ কাফেরের রূহ যেন তার দরজা দিয়ে না উঠানো হয়।

হাদীসের সূত্র : মিশকাতুল মাসাবীহহাদীস নং ১৬৩০মুসনাদে আহমদহাদীস নং ১৮৫৩৪

﹋﹋﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹋﹌﹋

** Note: ® [This is one of my Favorite Islamic Articles. I own none of the content within the post, only the drafting/typing time spent. No copyright infringement intended. The contents of this post are the intellectual property and copyright of their owner(s)/author(s). All content is owned by its respective owner(s)/companies. If you own any of the content and wish for me to remove this post from my personal blog "Bohemian's Diary" (former, Dnumkeatu's Diary) - A personal online diary : Where I Wandered Lonely as a Cloud...) please contact me and I will do so. Here this post is provided for educational purposes and personal use only. Thank you.]

﹋﹌﹋﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹋﹌﹋

*** N.B : [All the post on this blog "Bohemian's Diary" (former, Dnumkeatu's Diary) is only for Personal Collection/Personal use only. There are no other intention to Plagiarism on any others post or content. Advance apologize for any objection of any Author, Publisher, Blog, Website & the others printing media for posting/re-posting any contents on this Personal Blog - "Bohemian's Diary - A personal online diary : where I Wandered Lonely as a Cloud."]

*** Believe : "Happiness is a Choice & Life is Beautiful."
''Zindagi Na Milegi Dobara." Just keep Livin...!!!
Keep Smile.......!! Happy Living......!!! :) :) :)
Thank You, Good Luck......!!! :) :) :) 🌷🙏🌷

*** Posted by : © "Bohemian's Diary" (former, Dhumkeatu's Diary) || 07.04.2019 || 🇧🇩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রিয় গানের সংক্ষিপ্ত তালিকা...

**প্রিয় গানের সংক্ষিপ্ত তালিকা... ১) মন শুধু মম ছুঁয়েছে- সোলস ২)নিঃস্ব করেছ আমায় - শাফিন ৩)ফিরিয়ে দাও- মাইলস ৪)শ্রাবনের মেঘগু...