শনিবার, ২০ জুন, ২০২০

দ্রুত ঘুমানোর সহজ উপায়, উপকারিতা এবং অপর্যাপ্ত ঘুমের ক্ষতিকর প্রভাব

*এক মিনিটেই ঘুমানোর সহজ উপায় :

কর্মব্যস্ত দিনের শেষে বিছানায় গড়িয়ে লম্বা ঘুম। ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের পর ফের চাঙ্গা হয়ে নতুন করে কাজে লেগে পড়া। এ স্বপ্ন আমরা অনেকেই দেখি। কিন্তু বাস্তবে আর তেমনটা হয়ে ওঠে কোথায়? বিছানায় শুয়েও ঘুম আসতে চায় না অনেকেরই।

আর তার উপর স্মার্টফোনের নেশায় আসক্ত হলে তো আর কথাই নেই।
ঘরের আলো নিভিয়েই দীর্ঘক্ষণ স্মার্টফোনের দিকে চেয়ে থেকে নষ্ট হয় আরও খানিকটা সময়। রাতে আবার অনেকবার ঘুমও ভেঙে যায়। তাহলে উপায়? ভাল ঘুমের চাবিকাঠি আসলে কী? এ ভাবনা ভেবে আবার রাতের ঘুম ওড়াবেন না।

বিছানায় শোয়ার মিনিট খানেকের মধ্যেই ঘুম আসার একটি অত্যন্ত সহজ উপায় আছে।

একটি বিশেষ শ্বাসক্রিয়ার অভ্যাস করে ফেলতে পারলেই তাড়াতাড়ি ঘুম এসে যাবে। যে অভ্যাসের পোশাকি ভাষা ‘৪-৭-৮’। যাদের রাতে ঘুম আসে না তাদের জন্য এই সহজ উপায়ের পথ বাতলেছেন লেখক ডক্টর অ্যান্ড্রু ওয়েইল। ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে ঘুমের দেশে পৌঁছে যেতে কীভাবে নিঃশ্বাস নিতে হবে?

লেখক জানান, প্রথমে নাক দিয়ে চার সেকেন্ড শ্বাস নিন।

তারপর সাত সেকেন্ড শ্বাসক্রিয়া আটকে রাখুন। আর আগামী ৮ সেকেন্ড মুখ দিয়ে আস্তে করে নিঃশ্বাস ত্যাগ করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত ঘুম না আসে এভাবেই শ্বাসক্রিয়া চালান। বেশিক্ষণ না, মিনিট খানেকের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়বেন।

লেখকের মতে, এর ফলে হৃদপিণ্ডে কেমিক্যালের প্রভাব কমে যায়। আর তাতেই চটজলটি ঘুম এসে যায়।

আরেক লেখক আলিনা গোঞ্জালেজ বলছেন, “এমন অদ্ভুত অভ্যাসে যে তাড়াতাড়ি ঘুম আসে, বিষয়টা প্রথমে আমার কিছুতেই বিশ্বাস হয়নি। একপ্রকার পরীক্ষা করতেই ট্রিকটা করে দেখি। কিন্তু পরের দিন সকালে উঠে মনেই করতে পারলাম না শেষ আট সেকেন্ডের পর আর জেগেছিলাম কিনা। এতটাই গভীর ঘুম এসে গিয়েছিল। এই টেকনিকটা যেন ড্রাগের মতো কাজ করল। ” আসলে এভাবে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিলে দেহ-মন দুইই শান্ত হয়ে যায়। আর উত্তেজনা থেকে আপনাকে অনেকখানি দূরে নিয়ে যায়। তাই রাতে নিশ্চিন্ত ভাল ঘুমের জন্য একবার ‘৪-৭-৮’ ট্রিকটি ট্রাই করেই দেখুন না।

*দ্রুত ঘুম আসার ৫টি বৈজ্ঞানিক পন্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) মানুষের ৮ ঘন্টা ঘুমের সুপারিশ করেছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে প্রাপ্ত বয়স্কদের দু-তৃতীয়াংশই ঘুমের এ মেয়াদ পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়। ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিদ্রা বিশেষজ্ঞ ও স্নায়ু বিজ্ঞানী ম্যাথু ওয়াকারের মতে, চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানো মাতাল হয়ে গাড়ি চালানোর চেয়েও বিপজ্জনক। কম ঘুমালে তা নারী ও পুরুষের প্রজনন ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ওয়াকার উল্লেখ করেন যে, যেসব পুরুষ রাতে ৫ ঘন্টা ঘুমায় তাদের অন্ডকোষ যারা রাতে ৮ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ঘুমায় তাদের চাইতে আকারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছোট হয়ে যায়। কম ঘুম ক্যান্সার, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, মেদবৃদ্ধি, হৃদযন্ত্র বন্ধ, আলঝেইমার রোগ ও অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।

‘কেন আমরা ঘুমাই’ নামে ওয়াকারের একটি অডিও বুক আছে। সেটা নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলিং’বুক। ওয়াকার তাতে উল্লেখ করেছেনঃ ‘১৯ ঘন্টা না ঘুমানো কোনো ব্যক্তির অবস্থা দাঁড়ায় একজন মাতালের মতই। কোনো ব্যক্তি ১৬ ঘন্টা জেগে থাকার পর তার ব্রেন অচল হতে শুরু করে। বোধবুদ্ধি সচল ও সক্রিয় রাখার জন্য মানুষকে প্রতি রাতে কমপক্ষে ৭ ঘন্টারও বেশি সময় ঘুমাতে হবে। দশদিন যদি কেউ ৭ ঘন্টা ঘুমায় তাহলে তার ব্রেন সে রকম অকার্যকর হয়ে পড়বে যেমনটা কেউ যদি ২৪ ঘন্টা ঘুমহীনভাবে কাটায়।’ 

অতিরিক্ত এক বা দু’ঘন্টা ঘুম আপনার কাজ, স্বাস্থ্য, পরিবার, সম্পর্ক ও ভালোবাসার মানুষের সাথে ভালো বনাম মহতের মধ্যকার পার্থক্য নির্ণায়ক হতে পারে। এখানে পাঁচটি বৈজ্ঞানিক পন্থার কথা বলা হল যা আপনাকে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে ও অতিরিক্ত সময় ঘুম ফিরে পেতে সাহায্য করবেঃ 

১, একটানা ঘুমের সময় বহাল রাখা : 

নিদ্রা বিশেষজ্ঞ ওয়াকার বলেন, দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার জন্য আপনার শরীরকে প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য অন্যতম উত্তম পন্থা হচ্ছে বিছানায় যাওয়া এবং প্রতিদিন একই সময় জেগে ওঠা, তা রাতে আপনার ভালো ঘুম হোক আর না হোক। 
ওয়াকার বলেন, আপনার শুতে যাবার সময়টি আপনি যে সময়ে ঘুমানোর চিন্তা করেছেন তার একঘন্টা আগে ফোনে সে সময়টি সেট করে রাখুন যাতে সময়টি এলে রিমাইন্ডার টোন বাজে। আরেকটি কার্যকর পন্থা হল ঘুম-পূর্ব একটি রুটিন গড়ে তোলা যা আপনার দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস তৈরি করবে। 
উদাহরণ স্বরূপ, ঘুম-পূর্ব রুটিন সময়ে আমি পাঁচ মিনিট স্ট্রেচিং ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করি। তারপর বিছানায় শুয়ে একটি বই পড়ি এবং বইপড়া শুরুর দশ মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে যাই। 
ঘুম-পূর্ব সময়ে কী করলে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হয় তা পরীক্ষা করে দেখুন। 

২. ঘুমের জন্য অন্ধকার পরিবেশ সৃষ্টি :
আমরা এখন অন্ধকারবিহীন সমাজে বাস করি। কিন্তু সন্ধ্যায় মেলাটোনিন নিঃসরণে সাহায্যের জন্য আমাদের অন্ধকার দরকার। মেলাটোনিন হচ্ছে সেই হরমোন যা আমাদের সুষ্ঠু ঘুমের সময় নির্ধারণ করে। নীল আলো আপনার ব্রেনকে বোকা বানাতে পারে এ চিন্তায় যে, এখনো দিনের বেলা যদিও তখন রাতের বেলা এবং আপনি ঘুমানোর চেষ্টা করছেন। 
ওয়াকার বলেনঃ ‘ এমনকি ৮ থেকে ১০ লাক্স ডিম লাইটের আভাসও দেখা গেছে মানুষের রাত্রিকালীন মেলাটোনিন নিঃসরণকে বিলম্বিত করেছে। মানুষ ঘুমাতে যাবার আগে পর্যন্ত যেখানে পর্যাপ্ত আলোয় আলোকিত যে লিভিং রুমে অবস্থান করে সেখানে আলো থাকে ২০০ লাক্স। মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ দিনের আলোর শক্তি সত্ত্বেও এই আলোর মাত্রা ব্রেনে ৫০ শতাংশ মেলাটোনিন-দমন মূলক প্রভাব ফেলতে পারে।’ (সূত্র ঃ কেন আমরা ঘুমাই)
ওয়াকারের পরামর্শঃ আপনার বাড়ির আলোর অর্ধেকের আলো কমিয়ে দিন এবং ঘুমাতে যাওয়ার ঘন্টাখানেক আগে সকল ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী বন্ধ করে দিন। এভাবে আপনি আপনার ঘুমের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবেন।

৩. শরীর ঠান্ডা রাখা :

ওয়াকারের মতে, দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার জন্য আমাদের শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস প্রয়োজন যা আমাদের মেলাটোনিন মাত্রাকে প্রভাবিত করে। যদি আপনি জেগেও ওঠেন, দেখেন যে আপনার হাত-পা দেহাবরণের বাইরে রয়েছে তাহলে সেটা এই লক্ষণ যে, আপনার শরীর ঘুমিয়ে পড়ার জন্য আসল উত্তাপ যথেষ্ট কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। আপনার শোবার ঘরের আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। 
শরীরের মূল উত্তাপ হ্রাস ও দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার আরেকটি পন্থা হচ্ছে বিছানায় যাওয়ার আগে গরম পানিতে গোসল।
ওয়াকার বলেনঃ ‘আপনি গোসল করলে তা আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ উত্তাপ নিঃসরণে সাহায্য করে এবং উত্তাপ হ্রাস পায়। এর ফলে আপনার শরীরের অভ্যন্তরের মূল তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে আপনি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েন। শোয়ার আগে গরম পানিতে গোসল স্বাস্থ্যবান বয়স্কদের ঘুম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পরিমাণ গভীর করে। 

৪. রাত ২টার পর ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার :

আমরা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের মস্তিষ্কে ঘুমের চাপ সৃষ্টির জন্য আডেনোসাইন নামে এক রাসায়নিকের সৃষ্টি হয় এবং আমরা বেশি সময় জেগে থাকলে ঘুমের প্রয়োজন বোধ করি। ১৬ ঘন্টা জেগে থাকার পর অ্যাডেনোসাইনের কারণে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য যথেষ্ট ক্লান্ত বোধ করি। ক্যাফেইনের একটি ডোজের পর, যেমন এক কাপ কফি থেকে, ক্যাফেইন ব্রেনে অ্যাডেনোসাইন গ্রহণের একটি রিসেপ্টর বন্ধ করে দেয় ও আবরণে ঢেকে ফেলে। 
১৬ ঘন্টা জেগে থাকার পর আপনার ব্রেন এ চিন্তায় বোকনা হয়ে থাকে যে, সে ১৬ ঘন্টা জেগে নেই, তা সে যতই ঝিমাক আর ক্লান্তি বোধ করুক না কেন। এটা এ কারণে , ক্যাফেইন অ্যাডেনোসাইনের ব্রেন সিগন্যাল বন্ধ করে দিয়েছে, সাথে সাথে ব্রেনে ঘুমের চাপ নির্দেশককেও নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে। 
ক্যাফেইন যতক্ষণ অ্যাডেনোসাইনকে বন্ধ করে রাখবে, আপনার দেহব্যবস্থায় অ্যাডেনোসাইনের বিশাল পরিমাণ ঘুমের রসায়ন তৈরি হয়। যখন আপনার শরীরের ব্যবস্থা ক্যাফেইন থেকে মুক্ত হয় তখন আপনি শুধু ক্যাফেইন গ্রহণের পূর্বের ঘুমেই ফিরে আসেন না, আপনি অতিরিক্ত ঘুমের চাপেও আবিষ্ট হন যা তৈরি করে অ্যাডেনোসাইন। এটাই হচ্ছে ‘ক্যাফেইন ক্র্যাশ’ যে অভিজ্ঞতা আগেও লাভ করেছেন। অন্য যে কোনো বদ অভ্যাসের মত আপনি আপনার খারাপ অভ্যাসগুলোকে আরো জোরদার করতে নিজের শক্তি বাড়ানোর জন্য আরেক ডোজ ক্যাফেইন নিতে পারেন।
ক্যাফেইনের গড় স্থিতি শক্তি ৫ থেকে ৭ ঘন্টা। সে কারণেই ওয়াকার রাত ২টার পর ক্যাফেইন খাওয়া পরিহার করতে বলেছেন। ‘আমরা কেন ঘুমাই’-তে ওয়াকার পরামর্শ দিয়েছেন যে, সন্ধ্যার পর মদ, এমনকি ওয়াইন বা হুইস্কি খাওয়া ভালো ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। অ্যালকোহল মধ্যরাতে ঘুমের ব্যাঘাতের বহুমুখী কারণ সৃষ্টি করে। সে সাথে আমাদের আরইএম ও স্বপ্নময় ঘুমকে বাধাগ্রস্ত করে যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

৫.জাগার পর বিছানায় থাকবেন না : 

আপনি জেগে ওঠার সময় নির্ধারণ করে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু হঠাৎ সে সময়ের এক বা দু’ ঘন্টা আগে জেগে গেলেন। আপনি জানেন যে, সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। এখন যদি আপনি না ঘুমান তাহলে অতিরিক্তি সময়ের ঘুমটাও হারাবেন। কিন্তু কিছু কারণে আপনি দুশ্চিন্তায় আছেন। তাই আপনি ঘুমাতে পারছেন না বা নিশ্চিত হতে পারছেন না যে, ঘুমাবেন নাকি উঠে দিনের কাজ শুরু করবেন। আমাদের ব্রেন অত্যন্ত সতর্ক। তাই আমরা যদি বিছানায় সকালের অতিরিক্ত সময় কাটাই তখন ব্রেন আমাদেরকে জেগে থাকতেই সহায়তা করবে, ঘুমাতে নয়। 
ওয়াকার বলেন, এই সমস্যা সমাধানের শ্রেষ্ঠ উপায় হল আরেকটি মৃদু আলোকিত রুমে চলে যাওয়া উচিত এবং ঘুম না আসা পর্যন্ত বই পড়ুন, ঘুম এলেই বিছানায় ফিরে আসুন। 

ওয়াকার মেডিটেশন বা ধ্যানকে দ্রুত ঘুমানোর একটা পন্থা বলে মনে করেন, বিশেষ করে দীর্ঘ বিমানযাত্রা ও তার ফলে সৃষ্প জেটল্যাগের ঘটনায়। বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মনকে শান্ত করে ও নার্ভাস সিস্টেমের সাথে লড়াই দুর্বল করে যা ইন্সমোনিয়ার এক প্রধান বৈশিষ্ট্য। 
ঘুমানো বিজ্ঞানের একটি আর্ট। এসব বৈজ্ঞানিক পন্থা আপনাকে দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করবে, তবে তা পাথরে খোদিত নির্দেশ নয়। আর সব কিছুর মত যা আপনার জীবনশৈলি ও পরিস্থিতির জন্য ভালো ও উপকারী আপনি তা পরীক্ষা করুন। তবে প্রধান বিষয় হচ্ছে সুস্থ, উৎপাদনশীল ও পরিপূর্ণ জীবনের জন্য ঘুম জরুরি। তাই আপনার জীবনে ঘুমকে গুরুত্ব দিন। 

*নিবন্ধকার মায়ো ওশিন মায়ো ওশিন ডটকমে লিখে থাকেন।

দ্রুত ঘুমানোর ৭ পরামর্শ

 কিছু লোক বালিশে মাথা রাখামাত্রই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়। কিন্তু অনেকেরই দ্রুত ঘুম আসে না, তারা বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করেন, তাদের ঘুমাতে সমস্যা হয়।

আপনি এই সতর্কতা শুনে থাকবেন যে, প্রতিদিন দীর্ঘ রাত জেগে থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। গবেষণায় পাওয়া গেছে, সার্কাডিয়ান রিদম সঠিকভাবে কাজ না করলে ওজন বৃদ্ধি, বিষণ্নতা ও ডায়াবেটিস হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকে।

ম্যান’স হেলথ ডটকমের নিদ্রা পরামর্শক এবং ‘দ্য স্লিপ সল্যুশন: হোয়াই ইউর স্লিপ ইজ ব্রোকেন অ্যান্ড হাউ টু ফিক্স ইট’র লেখক উইলিয়াম হান্টার বলেন, ‘অপর্যাপ্ত ঘুম এবং নিম্ন মানের ঘুম প্রত্যেকটি অর্গান সিস্টেমে বিরূপ প্রভাব ফেলে।’ তিনি যোগ করেন, ‘নিম্ন ঘুম আমাদেরকে অধিক ও নিম্নমানের খাবার খাওয়ার দিকে পরিচালিত করে। এটি হজম, কার্ডিয়াক কার্যক্রম, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ও ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে।’

দ্রুত ঘুমানো ও নিদ্রা সমস্যা কাটানোর পরামর্শের জন্য ঘুম বিশেষজ্ঞ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট রেডিটের ‘আস্ক রেডিট’ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ম্যান’স হেলথ। দ্রুত ঘুমানোর জন্য এই প্রতিবেদনের পরামর্শসমূহ মেনে চলার চেষ্টা করুন।

* দুধ পান করুন
ডা. উইন্টার বলেন, ‘দুধে প্রোটিন এ-ল্যাক্টালবুমিন থাকে। এই প্রোটিনে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রাইপ্টোফ্যান থাকে, যা মেলাটোনিন উৎপাদন করে- এই হরমোনটি ঘুমের প্ররোচনা যোগায়। গবেষণায় পাওয়া যায়, ট্রাইপ্টোফ্যান সমৃদ্ধ ডায়েট (যেমন- ডিমের কুসুম ও মিষ্টি কুমড়ার বীজ) ঘুমের বিকাশে সাহায্য করে। এছাড়া দুধের ক্যালসিয়াম মস্তিষ্কে ট্রাইপ্টোফ্যান শোষণে সাহায্য করে।

* স্লিপ ট্র্যাকার ব্যবহার বন্ধ করুন
অনেকেই নিয়মিত ফিটনেস বা স্লিপ ট্র্যাকার পরিধান করেন, যা তাদেরকে ঘুমের সময় ঠিক কি ঘটছে তা জানতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এটি কি আপনার ঘুমের জন্য ভালো? না, ঠিক তা নয়। জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল স্লিপ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, যারা পর্যাপ্ত ঘুম হবে কিনা এই দুশ্চিন্তা নিয়ে বিছানায় গিয়ে তাদের ঘুম ট্র্যাক করেছেন তাদের উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে তাদের ‘ঘুম না আসা’ সমস্যা আরো খারাপ দিকে অগ্রসর হতে পারে। গবেষকরা এই ডিসঅর্ডারকে ‘অর্থোসমনিয়া’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। ঘুম ট্র্যাকের প্রতি আসক্তিকে অর্থোসমনিয়া বলে।

* মেডিটেশন চর্চা করুন
ঘুম না আসার কারণে কি মানসিক চাপে আছেন? প্রমাণিত হয়েছে যে, মেডিটেশন করটিসলের মাত্রা হ্রাস করে। ফলে আপনি কম উদ্বেগ ও বেশি রিলাক্স অনুভব করবেন এবং এভাবে আপনার ঘুম আসার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। জেএএমএতে প্রকাশিত ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন বয়স্ক লোকদের দুশ্চিন্তা, খিটখিটে মেজাজ ও রুমিনেশন (অতীতের কোনো ঘটনার ভাবনায় এমনভাবে ডুবে থাকা যা বর্তমানকে বিপর্যয়ে ফেলে) হ্রাস করে স্লিপ কোয়ালিটি বিকাশে সাহায্য করেছে। মেডিটেশন শুরু করতে কোনো অ্যাপ বা মেডিটেশন প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ডা. উইন্টার ‘মিউজ’ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন, যা দ্রুত ঘুম আনয়নের জন্য মেডিটেশন চর্চায় সাহায্য করবে। রেডিটর ব্রিজি৩৫৯৪ বলেন, ‘আমি প্রতিরাতে ইউটিউবে গাইডেড মেডিটেশন সেশন শুনি। কখনো কখনো তাদের ইন্ট্রোডাকশন শেষ হওয়ার পূর্বেই আমি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ি।’

* বিছানাকে ঘুমোপযোগী করুন
যদি বিছানার পরিবেশ ঘুম না আসার কারণ হয়, তাহলে আপনি কন্ডিশনড অ্যারাউজালে আছেন, যার মানে হচ্ছে আপনি বিছানায় এমন কিছু করেন যা আপনার মস্তিষ্ককে ঘুমানোর পরিবর্তে জেগে থাকার প্রশিক্ষণ দেয়, যেমন- ফোনে ই-মেইল চেক করা। ডা. উইন্টার বলেন, ‘এটি বিস্ময়কর যে অনেক লোক আমাকে বলে যে তারা ৯টার দিকে বিছানায় যায় এবং ঘুম আসতে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। তাই আপনার বিছানাকে কেবলমাত্র স্লিপিং জোন বানান। রেডিটর ফিবরিজো বলেন, ‘ফোন বা বইয়ের পেছনে সময় নষ্ট না করে মস্তিষ্ককে দ্রুত ঘুমানোর প্রশিক্ষণ দিন।’ রেডিটর জেআইএমসিডিওএন২ বলেন, ‘বিছানায় যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘণ্টা পূর্বে সকল স্ক্রিন ও লাইট বন্ধ করুন। বিছানায় শোয়ার পর শরীরকে সম্পূর্ণরূপে রিলাক্সে রাখুন।’

* কিভাবে বিশ্রাম নিতে হয় জানুন
ঘুম না আসলে উদ্বিগ্ন হবেন না- আপনি যত বেশি রিলাক্সে থাকবেন, আপনার ঘুমের মতো উপকারিতা পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেড়ে যাবে। ডা. উইন্টার বলেন, ‘বিশ্রাম ঘুমের মতো উপকার করে এবং কিছু ক্ষেত্রে উভয়ের উপকারকে প্রভেদ করা যায় না।’ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের দ্বারা পরিচালিত ২০০৮ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, যখন বিশ্রাম নেবেন তখন ঘুমে কি ঘটে তা অনুকরণ করতে আপনার মস্তিষ্কের কিছু নিউরন থেমে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের মতে, বিশ্রাম স্ট্রেস হ্রাস করে, মেজাজ উন্নত করে এবং সতর্কতা, মানসিক স্বচ্ছতা, সৃজনশীলতা ও প্রেরণা বৃদ্ধি করে। বিশ্রাম আপনাকে প্রকৃত ঘুমের সকল উপকারিতা দিতে পারবে না, যেমন- জ্ঞানীয় পুনরুদ্ধার, বর্ধিত স্মৃতিশক্তি ও হরমোন নিয়ন্ত্রণ। মন ও শরীরের প্রকৃত পুনরুদ্ধারের সর্বোত্তম অপশন হচ্ছে ঘুম; কিন্তু যদি ঘুম যাওয়া কঠিন হয়, আপনি আপনার উদ্বিগ্ন মনকে এই বলে শান্ত করতে পারেন যে, বিশ্রাম আপনার মস্তিষ্ককে একটি ব্রেক দিচ্ছে। রেডিটর জ্যামোওয়াসুর মতে, আপনি বিশ্রামের সময় হাস্যকর বা মজার কিছু ভাবতে পারেন।

* এসি চালু করুন
গবেষণায় পাওয়া গেছে, ঘুমানোর জন্য শীতল পরিবেশ সর্বোত্তম। সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে আপনার থার্মোস্ট্যাটকে ৬০ থেকে ৬৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে রাখুন। এটি আপনার শরীরের মূল তাপমাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে, ঘুমের প্ররোচনা যোগায় এমন একটি প্রক্রিয়া উদ্দীপিত করে। অন্য একটি অপশন হচ্ছে: বেড-কুলিং প্রোডাক্ট। এ প্রসঙ্গে ডা. উইন্টার বলেন, ‘ঘুমানোর জন্য আপনার বিছানায় চিলিপ্যাডের মতো প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন।’

* ব্লিনকিং ট্রিক চেষ্টা করুন
লোকমুখে শোনা যায় যে, ব্লিনকিং ট্রিক (দ্রুত চোখ বন্ধ করা ও খোলা) ঘুম আনয়নে সাহায্য করে। কিছু রেডিটর এটির ওপর জোর দিচ্ছেন। রেডিটর খালিদের মতে, ‘চোখের পাতা বন্ধ ব্যতীত এক মিনিটের ব্লিনকিং আপনাকে ভারী ঘুম দিতে পারে।’

তথ্যসূত্র : ম্যান’স হেলথ

অপর্যাপ্ত ঘুমের প্রভাবে যা ঘটে

একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমের দরকার। অনেকে আছেন রাতে বসে বসে ঝিমুতে থাকেন তবুও ঘুমাতে যান দেরি করে। অনেকে মনে করেন কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়েও তো ভালো ভাবে সারাদিন কাজ করা যায়, তাহলে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমানোর কী দরকার। অপর্যাপ্ত ঘুমের প্রভাবে বেশ কিছু সমস্যা হয়।

এই সমস্যাগুলো কিন্তু এক বা দুই দিনের অপর্যাপ্ত ঘুমের জন্য খুব একটা বোঝা যায় না। তবে আপনি যদি রাতের পর রাত অপর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান, তাহলে সমস্যাগুলো দেখা দেওয়ার জন্য দীর্ঘ সময়ের দরকার হবে না।

আমেরিকার একজন নাগরিক র‌্যান্ডি গার্ডনার বিশ্বাস করতেন না যে, সুস্থ থাকার জন্য ঘুমের দরকার রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে তিনি নিজেই নিজের ওপর একটি পরীক্ষা করেন। তিনি প্রায় ১১ দিন ২৪ ঘন্টা না ঘুমিয়ে ছিলেন। তাও আবার কোনো প্রকার ওষুধ, মাদক বা অন্য কোনো সহায়ক ছাড়া। কিন্তু এক সময় ‌র‌্যান্ডিকে হার মানতেই হয়। তবে তিনি যখন হার মেনেছিলেন তখন তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন না। প্যারানোয়া, হ্যালুসিনেশন এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ইন্দ্রিয়গত সমস্যা দেখা দেয় তার এবং খুব দ্রুত তার চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।

রাতে একটি ভালো ঘুমের যে কী পরিমাণ দরকার তা নতুন করে বোঝানোর মতো কিছু নেই। তবে অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে আপনার শরীরে অনেক প্রভাব পড়তে পারে এবং অনেক দুর্ঘটনার স্বীকারও হতে পারেন আপনি। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই খারাপ প্রভাব এবং দুর্ঘটনা সম্পর্কে।

প্রচন্ড ক্ষিপ্ততা

প্রথমত অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে আপনার মানসিক বেশ একটা পরিবর্তন দেখা যাবে। মনে হতে পারে ঘুমানো দরকার বা কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করবে না। কিন্তু যখনই কোনো কাজ আপনার মনের মতো হবে না তখন আপনি হঠাৎ করে অনেক শক্তি পেয়ে যাবেন এবং ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবেন। এটা মূলত অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে হয়। এই ক্ষিপ্ততা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে যদি আপনি নিয়মিত কম ঘুমান।

মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু

সারাদিনের ব্যস্ততার প্রভাব রাতে ঘুমের ক্ষেত্রেও পড়তে পারে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে অনেকে কাজের পরিকল্পনা করতে থাকেন। যা আপনার মস্তিষ্ককে ধীরে ধীরে অকেজো করে দিচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি প্রমাণিত যে, দীর্ঘদিন ধরে অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে মস্তিষ্কের প্রায় ২০% অকেজো হয়ে পড়ে। বা প্রায় ২০ শতাংশ মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

ঝুঁকিপূর্ণ অনুভূতি

অপর্যাপ্ত ঘুম কী মানুষের অনুভূতিকে প্রভাবিত করে? হ্যাঁ, করে। এবং খুব খারাপ ভাবে অপর্যাপ্ত ঘুম আমাদের অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। একটি গবেষণার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত যে, নিয়মিত অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে মানুষের অনুভূতির সংবেদনশীলতা কমে যায়।

খাদ্যাভ্যাস 

অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে দিনের বেলা তন্দ্রা আসতে থাকে। এই তন্দ্রার ওপর আমাদের এক প্রকার নিয়ন্ত্রণ থাকে। তখন এই তন্দ্রা এড়ানোর জন্য আমরা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করি। কেউ অনিয়মিত খাবার গ্রহণ করেন। কেউ বেশি বেশি সিগারেট খেতে থাকেন যাতে করে ঘুমের তন্দ্রা না আসে। মূলত এটি একটি বাজে খাদ্যাভ্যাস তৈরি করে।

পরিকল্পনাহীনতা

প্রায় ৩৬ ঘণ্টা যদি আপনি না ঘুমিয়ে কাটান তাহলে আপনার মস্তিষ্ক কোনো কিছু পরিকল্পনা করার ক্ষমতা হারায়। যেমন কাজের ক্ষেত্রে বার বার থেমে যেতে হয় এবং বেশ সময় নিয়ে চিন্তা করতে হয় যে, ঠিক কীভাবে এই কাজটা করবেন। কারণ আপনার মস্তিষ্ক দ্রুত পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হয়। এতে অনেক সময় জানা জিনিসও ঠিক ভাবে করা যায় না।

মনোযোগ হারিয়ে ফেলা

দীর্ঘদিন ধরে অপর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে থাকলে আপনার যেসব মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে তার মধ্যে মনোযোগ হারিয়ে ফেলা অন্যতম। কোনো কাজ করতে করতে হঠাৎ অন্য কথা মনে পড়তে পারে বা অনেক সময় ধরে একই কাজ করছেন কিন্তু কী কাজ করছেন তা ভুলে যেতে পারেন।

স্মৃতিশক্তির বিলুপ্তি

অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে স্মৃতিশক্তির বিলুপ্তি ঘটতে পারে। খুব সহজেই বা অল্প সময়ে আপনি অনেক প্রয়োজনীয় সব তথ্য ভুলে যেতে পারেন।

দুর্বল মস্তিষ্ক

কাজের জন্য আপনি কম ঘুমাচ্ছেন? কিন্তু এটি জেনে আপনি খুব হতাশ হবেন যে, আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে কম ঘুমের কারণে কম দক্ষ করে তুলছে। কাজের সময় খুব অল্পতে আপনার মধ্যে ক্লান্তি, গ্লানি দেখা দিতে পারে কম ঘুমের কারণে। আপনি কাজে খুব দক্ষ হতেই পারেন কিন্তু কম ঘুমের কারণে দুর্বল মস্তিষ্ক আপনার কাজের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।

স্বল্পমেয়াদী স্মৃতি

স্বল্প ঘুমের কারণে আপনার দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিও স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিতে পরিণত হয়ে যায়। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে কোনো কথা বা কাজ বেশিক্ষণ মনে থাকে না। ফলে স্মৃতি সমূহ স্বল্পমেয়াদী হয়ে যায়, যা একটি নির্দিষ্ট সময় পর আর মনে থাকে না।

দুর্ঘটনা

অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে সকালে যখন আপনি গাড়ি বা বাইক চালিয়ে অফিসে যান তখন ঘুমের তন্দ্রা আসতে পারে এবং যা থেকে ঘটতে পারে নানান দুর্ঘটনা। যা অনেক সময় আপনার মৃত্যুর কারণও হয়ে উঠতে পারে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান।   

ভালো ঘুমের জন্য মধ্যযুগের সাতটি উপায়

মোবাইল ফোন সরিয়ে বরং সুচসুতো হাতে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ঘুম বিজ্ঞানীরাআধুনিক ব্যস্ত জীবনের সাথে তাল মেলাতে ভালো ঘুমের বিকল্প নেই। কিন্তু ভালো ঘুমের জন্য কি পূর্বপুরুষদের কোন সম্পর্ক আছে?

আর তাই ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সাশা হ্যান্ডলি ইংল্যান্ডের মধ্যযুগের টিউডর সময়ের (১৪৮৫-১৬০৩) ঘুমের ধরণ নিয়ে গবেষণা করেছেন।

সেই গবেষণায় তিনি এমন কিছু কৌশল বা ধরণ দেখতে পেয়েছেন ভালো ঘুমের জন্য যা মধ্যযুগে ইংল্যান্ডের টিউডর যুগের মানুষরা ব্যবহার করতো।

এ থেকে হয়তো আধুনিক যুগের মানুষরাও ভালো ঘুমের কিছু পরামর্শ পেতে পারেন।

মোবাইল ফোন সরিয়ে রাখুন বরং সুচসুতো হাতে নিন

ড. হ্যান্ডলি বলছেন, টিউডর সময়ে যদিও মোবাইল ফোন বা টেলিভিশন ছিল না, কিন্তু তারা এ সময় অন্য কোন কাজেও সময় দিতো না। কখনো কখনো বিছানায় বসে বা বিছানার পাশে তারা প্রার্থনা করতেন অথবা শুয়ে শুয়ে বই পড়তেন।

অনেক সময় নারীরা ঘুমানোর আগে সুই সুতো বা কাটা দিয়ে উলের কাপড় বুনতেন। এ ধরণের কাজ মাথাকে ঠাণ্ডা করে যা অনেকটা ধ্যানের মতো।

ঘুমের সমস্যায় রয়েছেন, এমন অনেককে এ ধরণের কাজের পরামর্শ দিচ্ছেন ঘুম বিজ্ঞানীরা।

মধ্যরাতে একবার ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠা খারাপ কিছু নয়, বলছেন বিজ্ঞানীরা

মধ্যরাতে একবার জেগে ওঠা

মধ্যরাতে একবার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া ভালো লক্ষণ যা টিউডর যুগেও ছিল বলে দেখতে পেয়েছেন ড. হ্যান্ডলি। তিনি বলছেন, প্রাক শিল্প যুগে মানুষজন দুইভাগে ঘুমাতো। অনেকে মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে উঠে মোমের আলোয় বই পড়তো বা চাদের আলোয় হাটাহাটি করতো। তারা হয়তো রাতে জেগে চার্চের ঘণ্টা শুনতো। সুতরাং রাত ১টা কি ২টার সময় ঘুম ভেঙ্গে খানিকক্ষণ সজাগ থাকা একেবারে খারাপ কিছু নয়।

ঘুমের আগে ভালো আর বাছাই করা খাবার খেতেন মধ্যযুগের মানুষরা

ভালো খাবার খাওয়া

ভালো ঘুমের সঙ্গে ভালো খাবারের সম্পর্ক রয়েছে। মধ্যযুগেও টিউডোররা জানতো তাদের ভালো খাবার কি হওয়া উচিত এবং অতিরিক্ত খাবার ঘুমের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে।

ড. হ্যান্ডলি বলছেন, বিশেষ করে ঘুমের আগে খাবারের বিষয়ে তারা খুব সতর্ক ছিল। তারা এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতেন যা খানিকটা ঠাণ্ডা ধরণের। বিশেষ করে তারা অনেক শসা খেতেন। কারো কারো মধ্যে খানিকটা অপিয়াম খাওয়ারও প্রবণতা ছিল।

মধ্যযুগে মানুষদের ব্যক্তিগত শয়নকক্ষের চিন্তা ছিল না

শুধু শয়নকক্ষের চিন্তা ঝেড়ে ফেলা

শুধুমাত্র শয়নকক্ষে ঘুমানোর চিন্তাটি আধুনিক যুগের একটি ব্যাপার। কিন্তু টিউডর যুগে পুরো বাড়িটি ঘুমানোর একটি জায়গা হিসাবে ভাবা হতো।

ড. হ্যান্ডলি বলছেন, তারা যেকোনো কক্ষেই ঘুমাতে পারতো। হয়তো সেসব কক্ষে ঘুমানো ছাড়াও আরো অনেক কাজ হতো। নিজেদের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে তাদের অত বেশি চিন্তা ছিল না। তারা হয়তো তাদের বিছানা অন্য অনেকের সঙ্গে ভাগ করে নিতেন। তাতে কখনো কখনো বিপদও ঘটতো। তবে ঘুমের জন্য একান্ত বিছানার যে ধারণা, সেটি তাদের ছিল না।

পোকামাকড় দূর করতে মধ্যযুগের মানুষজন বিছানার কাছে গোবর রাখতেন

বিছানার কাছে গোবর রাখা

মধ্যযুগের ঘুমের ধরণ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ড. হান্ডলি দেখতে পেয়েছেন, তারা পোকামাকড়ের কামড়ের ব্যাপারে খুব সচেতন ছিলেন। অনেকে গোলাপের তেল শরীরে মাখিয়ে রাখতেন। আবার গ্রাম এলাকায় অনেকে বিছানার কাছে বা পায়ের দিকে গরুর শুকনো গোবর বেধে রাখতেন, যাতে পোকামাকড় তাদের শরীরে না এসে সেদিকে চলে যায়।

ঘুমের আগে সব কাজ থেকে নিজেদের বিছিন্ন করতেন টিউডর যুগের মানুষরা

পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেয়া

আধুনিক যুগের তুলনায় টিউডর যুগের মানুষরা তাদের বিশ্রামের ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন। তারা ঘুমের প্রস্তুতির জন্য অনেক সময় নিতেন। সারা সব ধরণের কাজ থেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে নিতেন এবং শুধুমাত্র ঘুমের দিকেই মনোযোগ দিতেন। অনেকে ঘুমের আগে ধ্যানের মাধ্যমে মাথা থেকে সব চিন্তা সরিয়ে দিতেন।

এখন যেমন সব যন্ত্রপাতি বন্ধ করা আর কৃত্রিম আলো থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়া ভালো ঘুমের একটি উপায় হতে পারে।

সাশা হ্যান্ডলি পরামর্শ দিচ্ছেন, শিশুরা যেভাবে ঘুমায়, সবার উচিত এই ঘুমের সময়টাকে সেভাবেই ব্যবহার করা

বাচ্চাদের মতো ঘুমানো

অনেক মানুষ হয়তো রাতের বেলাতেও যখন তাদের ঘুমাতে যাওয়া উচিত, তখন অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থাকেন। হয়তো কেউ প্রার্থনা করেন, কেউ লেখালেখি করেন বা পাবে-রেস্তোরায় সময় কাটান। কিন্তু এর মাধ্যমে জীবন থেকে ঘুমের জন্য বরাদ্দ গুরুত্বপূর্ণ সময়টুকু হারিয়ে যায়।

তাই ড. হ্যান্ডলি পরামর্শ দিচ্ছেন, শিশুরা যেভাবে ঘুমায়, সবার উচিত এই ঘুমের সময়টাকে সেভাবেই ব্যবহার করা।

(বিবিসি টুমরো থেকে অনুদিত)

*Collected from Internet.

﹋﹋﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹋﹌﹋

🚫 Note: ® [This is one of my Favorite Bangla Articles. I own none of the content within the post, only the drafting/typing time spent. No copyright infringement intended. The contents of this post are the intellectual property and copyright of their owner(s)/author(s). All content is owned by its respective owner(s)/companies. If you own any of the content and wish for me to remove this post from my personal blog "Bohemian's Diary" (former, Dnumkeatu's Diary) - A personal online diary : Where I Wandered Lonely as a Cloud...) please contact me and I will do so. Here this post is provided for educational purposes and personal use only. Thank you.] ♥️

﹋﹌﹋﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹌﹌﹋﹋﹌﹋﹌﹋﹋﹌﹋

⚠ ️N.B : [All the post on this blog "Bohemian's Diary" (former, Dnumkeatu's Diary) is only for Personal Collection/Personal use only. There are no other intention to Plagiarism on any others post or content. Advance apologize for any objection of any Author, Publisher, Blog, Website & the others printing media for posting/re-posting any contents on this Personal Blog - "Bohemian's Diary - A personal online diary : where I Wandered Lonely as a Cloud."]

🔊 Believe : "Happiness is a Choice & Life is Beautiful."
''Zindagi Na Milegi Dobara." Just keep Livin...!!!
Keep Smile.......!! Happy Living......!!! :) :) :)
Thank You, Good Luck......!!! :) :) :) 🌹

📮 Posted by : © "Bohemian's Diary" (former, Dhumkeatu's Diary) || 20.06.2020 || 🇧🇩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রিয় গানের সংক্ষিপ্ত তালিকা...

**প্রিয় গানের সংক্ষিপ্ত তালিকা... ১) মন শুধু মম ছুঁয়েছে- সোলস ২)নিঃস্ব করেছ আমায় - শাফিন ৩)ফিরিয়ে দাও- মাইলস ৪)শ্রাবনের মেঘগু...